Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নিরাপদ দেশি ফলের চাষ দেবে পুষ্টি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি

(ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ-২০১৯ উপলক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় ‘খ’গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারী)

ভ‚মিকা : বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু ফল আবাদের জন্য উপযোগী। বর্তমানে সারাদেশে ১৩০ প্রজাতির ফলের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি বছর ৭০ প্রজাতির প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলের আবাদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হচ্ছে। ফল একটি অর্থকরী ফসল। ফলগাছ অন্যান্য গাছের ন্যায় কাঠ দেয়, ছায়া দেয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। নিয়মিত ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ সবল জীবন লাভ করা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৮৮ ভাগ মানুষ ভিটামিন এ, ৯০ ভাগ মানুষ ভিটামিন সি, ৯৩ ভাগ মানুষ ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগে। আমাদের দেশে এ পুষ্টি ঘাটতি পূরণে ফল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। তাই অতীতে বলা হতো-
‘যদি বাঁচতে চাও,
যত পার সবজি আর ফল খাও।’
শরীরের চাহিদামতো প্রতিদিন নিয়মিত ফল গ্রহণ করলে সুস্থ ও সবল দেহ নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। সারাদেশে প্রত্যেক বছর উৎপাদিত ফলসমূহ বর্তমানে দেশের মানুষদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণের সাথে সাথে দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। প্রতি বছর বিদেশি ফল আমদানিতে প্রচুর অর্থের ব্যয় হয়। তাই বর্তমানে নিরাপদ দেশি ফলমূল দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধরে রেখেছে।
ফল একটি রোগ প্রতিরোধক খাদ্য : ফলকে রোগ প্রতিরোধক খাদ্য বলা হয়। ফল আমাদের শরীরে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। অথচ আমরা ফলকে গুরুত্ব দেই না।       পুষ্টিবিদরা একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দৈনিক প্রায় ২০০ গ্রাম ফল গ্রহণ করার সুপারিশ করেছেন। ফলে দেহের জন্য অপরিহার্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খলিজ লবণ ও আঁশ থাকে। এসব পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও খাদ্যদ্রব্য হজম, পরিপাক, বিপাক, খাবারে রুচি বৃদ্ধি বদ হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে। ফলের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো-
আমাদের মোট খাদ্যের শতকরা ১ ভাগ আঁশ থাকা উচিত। আঁশ হজম, পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য এবং শর্করা, চর্বি ও আমিষ দহনে সহায়তা করে। এছাড়াও খাদ্যের আঁশ মলাশয়ের ক্যান্সার, বহুমূত্র, এপেন্ডিসাইটিস, মূত্রনালিতে পাহারসহ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীরকে স্বাচ্ছন্দ্য ও সাবলীল করে রাখে।  দেশীয় হলুদ রঙের ফলে প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটিন (প্রাক  ভিটামিন এ) থাকে। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ ও অন্ধত্ব হতে প্রতিরোধ
করে। এছাড়াও ফলের ভিটামিন বি-১ খাদ্যদ্রব্যকে রূপান্তর, হজম ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।   

দেশে নিরাপদ ফল চাষ : বাংলাদেশ আর্দ্র ও উষ্ণ মÐলীয় দেশ। এদেশের উর্বর মাটি প্রায় সব ধরনের গ্রীষ্ম ও অগ্রীষ্ম মÐলীয় ফল চাষের অনুক‚লে। বর্তমানে এদেশের যে পরিমাণ ফল উৎপাদিত হয় তা পুষ্টি বিজ্ঞানীদের সুপারিশকৃত মাত্রার মাত্র ৩৫% পূরণ করতে পারে। অবশিষ্ট ৬৫% ঘাটতি বিধায় দেশি ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রসারণ কাজের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চল, পতিত জমি, বসতবাড়ি প্রভৃতিসহ বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এদেশে দেশি ফলের গড় ফলন অত্যন্ত কম। উন্নতজাতের চাষ, কলমের চাষ, উন্নত চাষাবাদ ও নিবিড় পরিচর্যা, সঠিক রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
মাঠ ফসলের তুলনায় ফলের চাষ অধিক লাভজনক। তাই সম্প্রতিকালে বিভিন্ন ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা ও কুলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও অপ্রচলিত বাগান হচ্ছে না। ফলশ্রæতিতে বাণিজ্যিক চাষাবাদের কারণে অপ্রচলিত অনেক ফল ভবিষ্যতে দেশ থেকে বিলীন হওয়ার এক অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বাজারে আপেলকুল, বোম্বে লিচু, থাই পেয়ারা ইত্যাদি ফল উৎপাদন এক বিরাট সারা জাগিয়েছে দেশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২০ সালে ১৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে এবং জনপ্রতি দৈনিক ১২০ গ্রাম হিসেবে ফলের চাহিদা বাড়বে ৭৫ লাখ টন।
১২ মাসের নানান ফল : ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রায় ১৩০ প্রজাতির ফল জন্মে এ দেশে এর মধ্যে ৬০টি হলো বুনো ফল বনে জন্মে। প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ ফল উৎপাদিত হয় গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতুতে। ফল উৎপাদনের প্রধান মাস হলো জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস। বেশি উৎপাদনের কারণে একদিকে ফলের প্রাপ্যতা বেড়ে যায়। এ দুই মাসে বেশি ফল খেতে পারলেও বাকি দশ মাসে সন্ধান মেলে অল্প কিছু সংখ্যক ফলের। শীতকালে কমলা আর কুল ছাড়া অন্য কোনো ফল পাওয়া মুশকিল হয়ে পরে। অবশ্য কলা ও পেঁপে বারো মাসই উৎপাদিত হচ্ছে। এমনকি গবেষণার সুবাদে এখন বছরে ৭ মাসে আম পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি তথা হরমোন ব্যবস্থা ব্যবহার করে বছরে বারো মাসই আনারস উৎপাদিত হচ্ছে। প্রধান উৎপাদন মৌসুম ছাড়াও অন্যান্য মৌসুমে ফল উৎপাদন করতে পারলে তা ফলের বাড়তি উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষকদের অধিক লাভবান করতে পারে। বারো মাসে থাই পেয়ারা উৎপাদনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এজন্য ফল চাষি ও বাড়ির গৃহস্থদের একটু পরিকল্পনা করে ফল চাষ করতে হবে। একই ফলের বিভিন্ন জাত লাগিয়েও কয়েক মাস ধরে ফল পাওয়া যায়।
ফল চাষের বর্তমান অবস্থা : দেশি ও বিদেশি ফলসহ বাংলাদেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে থাকে। প্রচলিত ফলের মধ্যে কলা, আম, আনারস, পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, বাতাবি লেবু, লিচু, কুল, নারকেল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে বহু রকমের ফল উৎপাদনের সত্তে¡ও মাথাপিছু দৈনিক ফলের প্রাপ্যতা মাত্র ৩৫-৪০ গ্রাম যা পুষ্টি বিজ্ঞানীদের সুপারিশকৃত ন্যূনতম চাহিদা মাত্রার অনেক কম (১১৫-১২০ গ্রাম) বর্তমানে বাংলাদেশে ১.৪৪ লাখ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২২ লাখ টন ফল উৎপাদন হয়। অথচ দরকার প্রায় ৬৭.০ লাখ মেট্রিক টন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলের প্রাপ্তির পরিমাণ ও উৎপাদন বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশে যে সব ফল উৎপাদন হয় তার মধ্যে তরমুজ, আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, নারকেল, পেয়ারা ও আনারস এই সাতটি ফলের উৎপাদন ১৭.৫ লাখ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের ৮০ ভাগ।
বর্তমানে নার্সারির আধুনিক উন্নত জাত ও কলমের চারা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে ফল চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে ফলের গড় ফলন ও বৈদেশিক বাজারমূল্য বিবেচনায় ব্যাপক ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে ফল ও ফলজাত দ্রব্যাদি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বর্তমানে রপ্তানির পরিমাণ ২৫-৩০%।
ফল চাষে বিভিন্ন সংস্থার ভ‚মিকা : বাংলাদেশে ফলগাছ লাগানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা প্রথম থেকেই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করে যাচ্ছে। নি¤েœ দেয়া হলো-
ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র : উষ্ণ ও অবউষ্ণ মÐলীয় ফলের ওপর নিবিড় গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে অদ্যবধি ৩২টি বিভিন্ন ফলের ৭৬টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে এবং ৭১টি টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার আম, পেয়ারা ও কুলের বেশ কয়েকটি নতুন জাতও উদ্ভাবন করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) : প্রতি বছর প্রায় এক কোটিরও বেশি ফলদ বৃক্ষ লাগানোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শুধু গাছ লাগানোই নয় গাছ লাগানোর পর তার পরিচর্যার মাধ্যমে মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন, আহরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ করা যায় তার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ডিএই-এর আওতায় সারাদেশে ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রতি বছর মানসম্পন্ন চারা উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়। এসব সেন্টার থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৭.৫২ লাখ চারা ও ৬.৬৩ লাখ কলম উৎপাদন হয়।
বিএডিসি : ফল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিএডিসিও কাজ করে যাচ্ছে। বিএডিসিও উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ ও এগ্রো সার্ভিস সেন্টার-এর মাধ্যমে সারাদেশে ২৩ প্রদর্শনী খামার এবং প্রদর্শনী খামার প্রকল্প এলাকার মাধ্যমে ফল উৎপাদন করছে। এছাড়াও বরেন্দ্র (বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ), রাজশাহী ও বন বিভাগও উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করছে।
সরকারের বহুমুখী উদ্যোগ এবং কৃষি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণবিদ ও ফল চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশে^ সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে বিশে^ অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে আর মোট ফল উৎপাদনে বিশে^র ২৮তম স্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) : বাংলাদেশ সরকার ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও পুষ্টি সম্পর্কৃত গবেষণার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই বারটান প্রতিষ্ঠা করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনসচেতনতা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে সুষম ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ‘নার্সারি গাইড লাইন্স ২০০৮’ প্রণয়ন করে নার্সারি শিল্পের মনোন্নয়ন করা হয়েছে এবং নিয়মিত ফল মেলার আয়োজন করা হচ্ছে এবং বাজার সংযোগ স্থাপনের সহায়তায় কাজ করছে।
মানুষের পুষ্টি সরবরাহে ফল : শরীরের চাহিদামতো পুষ্টি সরবরাহ করতে হলে ফল উৎপাদন, আহরণ, বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদিত ফলের এক বিরাট অংশ সংগ্রহের পর বিভিন্ন পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশে উৎপাদিত ফল ও সবজির ২৫ থেকে ৪০ ভাগই সংগ্রহের পর বিভিন্ন পর্যায়ে নষ্ট হয়। তাই মানুষের যথাযথ পুষ্টি যোগানে বাংলাদেশে নিরাপদ ফল চাষের গুরুত্ব যেমন অপরদিকে বিশাল পরিমাণের এই ফলমূল পচনের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদেরকে এর প্রক্রিয়াজাত সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।
বর্তমানে ভরা মৌসুমে ফলের অধিক সরবরাহের ফলে দাম অনেক কমে যায়, ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে সংগ্রহের পর যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ করা হলে একদিকে অপচয় কমবে, অপরদিকে উৎপাদনকারীর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়ে বছরব্যাপী সারাদেশের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করা যাবে। তাই বলা হতো-
‘ফল খাই পুষ্টি পাই
আসুন ফলের গাছ লাগাই।’
উন্নত প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বেশি দিন ফল সংরক্ষণ, আকর্ষণীয় বাজারে মূল্য প্রাপ্তি এবং বিদেশে রপ্তানিসহ সর্বোপরি সকলের পুষ্টি নিশ্চিত।
মানুষের পুষ্টি যোগানে নিরাপদ দেশি ফলের অবদান : বাংলাদেশ উষ্ণ-অবউষ্ণ জলবায়ুর দেশ। এ দেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার। ফল ভিটামিন ও খনিজ লবণের অন্যতম উৎস। ফলের নানান উপাদান মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের মাথাপিছু দৈনিক ফলের প্রাপ্যতা মাত্র ৩৫ গ্রাম যা পুষ্টি বিজ্ঞানীদের সুপারিশকৃত চাহিদার এক                 তৃতীয়াংশেরও কম। একদিকে নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও বসতবাড়ির জন্য প্রতিদিন ২২ হেক্টর হিসেবে বছরে প্রায়ই ৮৩,০০ হেক্টর আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানো বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ি তবে প্রতি ১০০ গ্রাম দেশীয়  নিরাপদ ফলের মধ্যে আম, লিচু, পেয়ারা, পাকা, তাল, কামরাঙা, বেল ও আতাফলে ৫০ থেকে ১০০ ক্যালরি থাকে। এই ক্যালরি মানুষদেরকে          নানানভাবে দেহ গঠনে সহায়তা করে।
ি ভিটামিন এ শরীরের চাহিদামতো গ্রহণ করলে রাতকানা রোগ ও অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কাজেই অল্প পরিমাণ আম, কাঁঠাল ও পেঁপে খেলেই আমাদের ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হয়।
এভাবেই দেশীয় ফল আমাদের পুষ্টি দানে সর্বোত্তম ভ‚মিকা পালন করে।
দেশি থাই পেয়ারা : ফলের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিদেশি আপেলের। প্রতি বছর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছিল বিদেশি এই ফলের আমদানি। গত অর্থছরেও প্রতিদিন গড়ে ৭ কেজি আপেল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। তবে এই অর্থবছরে আপেল আমদানি কমে নেমেছে দিনে ৫ লাখ কেজিতে। গতবছরে ২ লাখ ৫৭ হাজার টন আপেল আমদানি হয়। প্রতি টন ১ হাজার কেজি হিসেবে তা দাঁড়ায় ২৫ কোটি ৭০ লাখ কেজি। তাতে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। শুল্ককর পরিশোধ করে এই আপেল খুচরা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছায়। খুচরা বাজারজাত হিসেব করে দেখা যায় শুধু আপেলের বাজারই ৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার। তাই বর্তমানের বাজার প্রেক্ষিতে -
‘বিদেশি আপেলের বাজারে ভাগ
বসিয়েছে দেশে উৎপন্ন থাই পেয়ারা।’
বিদেশি আপেলের এই বড় বাজারে ভাগ বসিয়েছে দেশে উৎপাদিত থাই জাতের পেয়ারা। আপেলের চেয়ে দাম কম এবং নিরাপদ রাসায়নিক হওয়ায় আপেলের বদলে মানুষ এখন এই পেয়ারা বেছে নিচ্ছেন। আর তাতেই আপেল আমদানি কমে যাচ্ছে। আপেলের মতো নাশপাতিও বিভিন্ন ধরনের সাইট্রাস বা লেবু জাতীয় ফলের আমদানিও কমেছে। সুতরাং নিরাপদ দেশি ফল এখন অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখছে।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে দেশি ফলের অবদান : ফল চাষকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নার্সারি যার সংখ্যা কয়েক সহ¯্র অধিক। এসব নার্সারি থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার চারা ও কলম বিক্রি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করছে।
বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ফল চাষসহ কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হয়েছে এবং এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে যে বিপ্লব সাধিত হয়েছে তা যাতে অব্যাহত থাকে এর জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির নিমিত্ত প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণকে কৃষি মন্ত্রণালয় এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের     মাননীয় মন্ত্রীর প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে যে কৃষক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ বৃষ্টির ধকল কাটিয়ে ফল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে সে যেন প্রয়োজন মতো সব কৃষি বসতবাড়ি ছাড়াও তার এলাকার বিভিন্ন স্থানে আরও ফলগাছ রোপণ করে তবে তা অত্যন্ত লাভজনক  অপরদিকে দেশের ওইসব নিরাপদ ফলসমূহ মানুষের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে। দেশে উৎপাদিত ফলের উপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেছে। এছাড়া উন্নত পদ্ধতিতে ফল চাষের মাধ্যমে গ্রামীণ চাষের আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্যমোচন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে দিনে দিনে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হিসেবে গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ২১ লাখ কেজি।  সুতরাং দেশি ফলের গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে।
নিরাপদ ফল চাষের প্রয়োজনীয়তা ও মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি :  দেশে নিরাপদ ফল চাষে সচেতন হতে হবে আমাদের ফল চাষি সমাজকে। একমাত্র এই নিরাপদ ফলই আমাদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারবে এবং যা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
বিটিসি নিউজ ডেস্ক : বিটিসি নিউজে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনে সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন,‘পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনেও সচেতন হওয়া আবশ্যক। এতে দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া যাবে।’
প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় বৃক্ষ রোপণপক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জলবায়ু ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রকৃতির এই অপার সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সবাইকে এর জন্য সচেষ্ট হতে হবে। দেশীয় ফলের উন্নত জাত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করতে হবে।
তাই সর্বোপরি ফলচাষে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
উপসংহার : প্রযুক্তিগত কার্যক্রম প্রয়োগের মাধ্যমে দেশি ফলের ফলন বৃদ্ধি ও মান সম্পন্ন ফল উৎপাদনে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে কারন বাংলাদেশের এই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া নিরাপদ ফল চাষের জন্য উপযোগী এবং এক কথায় সর্বোত্তম। অধিক উৎপাদিত দেশি ফল পুষ্টিহীনতা দূরীকরণের পাশাপাশি দানাদার খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস সংকোচিত করে খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ভ‚মিকা রাখবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদনও বেড়েছে দ্বিগুণ। দেশীয় ফলমূলের ব্যাপক উৎপাদন জাতীয় পর্যায়ে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে।
‘অপ্রতিরোধ্য দেশের অগ্রযাত্রা,
ফলের পুষ্টি যোগাবে নতুন মাত্রা।’
বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলমূলের নিরাপদ নিশ্চিতকরণে ফল চাষিদের সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ একমাত্র এই নিরাপদ ফলমূলই মানুষের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে এবং আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে এবং আমাদের অর্থনীতিকে বিকশিত করছে দিন দিন।

মনোরঞ্জন রাজবংশী

একাদশ শ্রেণী পাবনা ক্যাডেট কলেজ, পাবনা, মোবাইল : ০১৩০৬৬৯৩৪১১


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon